দুর্নীতিবাজদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনতে হবে

Daily Inqilab ইনকিলাব

০৮ মে ২০২৪, ১২:১৫ এএম | আপডেট: ০৮ মে ২০২৪, ১২:১৫ এএম

রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড (পিজিসিবিএল)-এর পক্ষ থেকে মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য আমদানিকৃত হ্যান্ড টুল্স ও নাট-বল্টুর অস্বাভাবিক উচ্চমূল্যের খবর গত মাসের প্রথমদিকে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল। গত জানুয়ারিতে মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য আমদানিকৃত দুটি হাতুড়ির দাম দেখানো হয়েছিল ১ লাখ ৮২ হাজার টাকা এবং দুটি পাইপ কাটারের দাম দেখানো হয়েছিল ৯২ লাখ ৯৯ হাজার টাকা। কাস্টমস কর্তৃপক্ষ পাওয়ার গ্রিড কোম্পানির কাছে অস্বাভাবিক উচ্চমূল্যের সঠিক জবাব না পাওয়া গেলেও খোঁজ খবর নিয়ে জানা যায়, আমদানিকৃত একই ধরণের জার্মানির তৈরী একেকটি হাতুড়ির দাম ১৩.৯০ ইউরো বা ১৬৬৮ টাকা। একই রকম পাইপ কাটারের দাম ৬০.২৭ ইউরো বা ৭২৩২ টাকা। আমদানিকৃত পণ্যের মূল্য দেড় হাজার গুণ বেশি দেখিয়ে দেশের টাকা পাচার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গতকাল ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, চীনা কোম্পানি টিবিইএ লিমিটেডের মাধ্যমে ভারত থেকে ৬৮ কিলোগ্রাম বিদ্যুতের টাওয়ারবোল্ট, নাট ও ওয়াশার কেনা হয়েছে ২ লাখ ৩৯ হজার ৬৯৫ ডলার দিয়ে, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ২ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। প্রতি কেজি এসব সরঞ্জামের প্রতি কেজির দাম ২.১৮ ডলার হিসেবে প্রকৃতমূল্য হওয়ার কথা ১৪৮ ডলার। অথচ কেনা হয়েছে ১৬১৯ গুণ বেশি দামে। মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে বলা হচ্ছে, আমদানিকৃত পণ্যের এমন অস্বাভাবিক উচ্চমূল্য দেখানো এবং আগে আমদানিকৃত পন্যের কনসাইনমেন্ট ডক্যুমেন্টের সাথে গড়মিলের বিষয়ে পিসিবিএল কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারেনি। তারা এখন মানবিক ভুল-ত্রুটির কথা বলে আটককৃত পণ্যগুলো ফেরত বা পুনরায় রফতানি করার কথা বলছে। কাস্টমস হাউজের পর্যবেক্ষণে বেশি দামে পণ্য আমদানির তথ্য ধরা পড়ার পর তারা এটিকে ভুলবশত আমদানি করা হয়েছে বলে দায় এড়াতে চাইছে। পর্যবেক্ষকদের মতে, রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুন্ঠন ও পাচারের সবচেয়ে সহজ পন্থা হিসেবে তারা মেগা প্রকল্পের পণ্য আমদানিতে ওভার ইনভয়েসিংয়ের সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, ইতিপূর্বে রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের আবাসিক প্রকল্পের বালিশ ও আসবাব কেনা এবং ফরিদপুর মেডিকেল কলেজের পর্দা ও সরঞ্জাম কেনায় এমন অস্বাভাবিক উচ্চ মূল্যের চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশিত হলেও এসবের সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার না হওয়ায় বেশিরভাগ প্রকল্পে এমন অস্বাভাবিক ব্যয় দেখিয়ে রাষ্ট্রীয় অর্থ তছরুপ অব্যাহত রয়েছে।

দেশের অর্থনীতি নানামুখী চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। অর্থনৈতিক নানা পদক্ষেপ নেয়ার পরও সংকট উত্তরণ সম্ভব হচ্ছে না। বেকারত্ব বৃদ্ধি, মানুষের আয় কমে যাওয়া, শ্রমিক-কর্মকর্তা ছাঁটাই, নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতি, মূল্যস্ফীতি, রিজার্ভ কমে যাওয়া, আমদানি-রফতানি বাণিজ্য হ্রাস ইত্যাদি সংকটে দেশ নিপতিত। দেশে টাকার সংকট প্রকট। লুটপাটের কারণে ব্যাংকগুলোতে পর্যাপ্ত অর্থ নৈই। সার্বিক অর্থনীতিতে স্থবিরতা বিরাজ করছে। এ অবস্থার মধ্যেও দুর্নীতি থেমে নেই। সরকারেরই একটি শ্রেণী বেসুমার দুর্নীতিতে লিপ্ত। কিভাবে অর্থ লুটপাট ও পাচার করা যায়, এ নিয়ে আখের গোছাতে ব্যস্ত। খুব কম প্রকল্পই রয়েছে যেখানে অধিক সময় ও অর্থ ব্যয় এবং দুর্নীতি হচ্ছে না। সুযোগ সৃষ্টি হলেই দুর্নীতি করতে ছাড়ছে না। যার বড় প্রমাণ বিদ্যুতের সরঞ্জামাদি অধিক মূল্যে ক্রয় করা। দেশে অর্থনৈতিক সংকট ও দুর্নীতি যেন সমানতালে চলছে। এখন প্রকল্প ও এর নির্মাণ সামগ্রী কেনা মানেই তাতে দুর্নীতির সুযোগ তৈরি হওয়া। এ সুযোগ একটি শ্রেণী নিচ্ছে। বিদ্যুৎকেন্দ্র ও বিদ্যুৎ খাতের নির্মাণ ব্যয় ও খরাচাদি নিয়ে যাতে প্রশ্ন তোলা না যায়, সেজন্য অনেক আগেই ইনডেমনিটি আইন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে জাবাবদিহিতা বন্ধ ও দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেয়া হয়েছে বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করেন। জনগণের সম্পদের এমন বল্গাহীন অপচয়, লুটপাট কিংবা অর্থ পাচারের মচ্ছব অবারিত রেখে দেশের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করা অসম্ভব। প্রকল্পে দুর্নীতি-অস্বচ্ছতার পাশাপাশি অস্বভাবিক সময় ক্ষেপণের মাধ্যমে একেকটি মেগা প্রকল্প একদিকে তার প্রকৃত উপযোগিতা হারাচ্ছে, অন্যদিকে প্রলম্বিত নির্মানাধীন প্রকল্পের জনগণের ভোগান্তিও হচ্ছে। বিআরটি ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে দীর্ঘসূত্রিতার কারণে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কে দশক ধরে যাত্রীদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত খবরে বিদেশি তিন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যকার দ্বন্দ্বের মামলাবাজির কারণে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে।

সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পে একের পর এক দুর্নীতি ধরা পড়লেও এর সাথে জড়িতদের বিচার করার কোনো নজির নেই। এ নিয়ে সংসদেও কোনো আলোচনা করতে দেখা যায় না। একশ্রেণীর সরকারি কর্মকর্তার দুর্নীতি প্রকাশ হলেও তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। শত শত কোটি টাকার দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের বিশ্বাসযোগ্য ক্লু থাকলেও বিচারের আওতায় আনা হচ্ছে না। এ কথা বলা অত্যুক্তি হবে না, সরকারি কর্মকর্তাদের কেউ দুর্নীতি করলে যেন তার বিচার করা যাবে না। দুর্নীতির এক ধরনের দায়মুক্তির লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। রন্দ্রে রন্দ্রে দুর্নীতির সংস্কৃতি গেঁড়ে বসেছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থাগুলোর কোনো নিয়ন্ত্রণ ও স্বচ্ছতা নেই। বিদ্যুতের সরঞ্জামাদি কেনা নিয়ে যে দুর্নীতি হয়েছে, তার সাথে জড়িতদের অবিলম্বে কঠোর শাস্তিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এর সাথে দেশি-বিদেশি যারাই জড়িত থাকুক, তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

এমপি আনোয়ারুল আজিমের ব্যবহৃত নম্বরটি খুলছেন আবার বন্ধ করছেন: ডিবি

এমপি আনোয়ারুল আজিমের ব্যবহৃত নম্বরটি খুলছেন আবার বন্ধ করছেন: ডিবি

লুটপাট করে গণতন্ত্র ও নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছে আ'লীগ: প্রিন্স

লুটপাট করে গণতন্ত্র ও নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছে আ'লীগ: প্রিন্স

অ্যাকাডেমিক ব্যাংকিং সেবা ‘প্রাইমঅ্যাকাডেমিয়া’ চালু করলো প্রাইম ব্যাংক পিএলসি

অ্যাকাডেমিক ব্যাংকিং সেবা ‘প্রাইমঅ্যাকাডেমিয়া’ চালু করলো প্রাইম ব্যাংক পিএলসি

বাংলাদেশ প্রেসক্লাব ইউএইর সভাপতি মামুন সম্পাদক মুহাম্মদ মোরশেদ

বাংলাদেশ প্রেসক্লাব ইউএইর সভাপতি মামুন সম্পাদক মুহাম্মদ মোরশেদ

পোশাকখাতের উন্নয়নে ইইউকে সহযোগিতা অব্যাহত রাখার আহ্বান বিজিএমইএর

পোশাকখাতের উন্নয়নে ইইউকে সহযোগিতা অব্যাহত রাখার আহ্বান বিজিএমইএর

দেশের অর্থনৈতিক দুরবস্থা ও রিজার্ভ সংকট জাতির জন্য অশনি সংকেত: ১২ দলীয় জোট

দেশের অর্থনৈতিক দুরবস্থা ও রিজার্ভ সংকট জাতির জন্য অশনি সংকেত: ১২ দলীয় জোট

সংকট গভীর হওয়ার আগেই রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের স্থায়ী সমাধান জরুরি : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

সংকট গভীর হওয়ার আগেই রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের স্থায়ী সমাধান জরুরি : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

ইরানের প্রেসিডেন্ট ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বহনকারী হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত : চলছে অনুসন্ধান

ইরানের প্রেসিডেন্ট ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বহনকারী হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত : চলছে অনুসন্ধান

পর্তুগাল বাংলা প্রেস ক্লাবে যুক্ত হলেন একদল নতুন সদস্য

পর্তুগাল বাংলা প্রেস ক্লাবে যুক্ত হলেন একদল নতুন সদস্য

কাল থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত দেশের সামুদ্রিক জলসীমায় মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধ

কাল থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত দেশের সামুদ্রিক জলসীমায় মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধ

দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলতে কারিগরি শিক্ষার বিকল্প নেই : মহিলা ও শিশু প্রতিমন্ত্রী

দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলতে কারিগরি শিক্ষার বিকল্প নেই : মহিলা ও শিশু প্রতিমন্ত্রী

মিডিয়ার কন্ঠরোধ করে দেশকে বাকশালের দিকে নিয়ে যাচ্ছে সরকার

মিডিয়ার কন্ঠরোধ করে দেশকে বাকশালের দিকে নিয়ে যাচ্ছে সরকার

ইনফ্লেমেটরি বাওয়েল ডিজিজ নিয়ে গবেষণা চলছে: বিএসএমএমইউ উপাচার্য

ইনফ্লেমেটরি বাওয়েল ডিজিজ নিয়ে গবেষণা চলছে: বিএসএমএমইউ উপাচার্য

বৈষম্য কমিয়ে শ্রমজীবী মানুষের ন্যায্য মজুরিসহ অধিকার নিশ্চিত করতে হবে : ড. খলীকুজ্জমান

বৈষম্য কমিয়ে শ্রমজীবী মানুষের ন্যায্য মজুরিসহ অধিকার নিশ্চিত করতে হবে : ড. খলীকুজ্জমান

২৪ ঘন্টা থেকে সাত দিনের মধ্যে মৃত বীমা দাবি পরিশোধ করবে এনআরবি ইসলামিক লাইফ ইনসুরেন্স কোম্পানি

২৪ ঘন্টা থেকে সাত দিনের মধ্যে মৃত বীমা দাবি পরিশোধ করবে এনআরবি ইসলামিক লাইফ ইনসুরেন্স কোম্পানি

বেগম সুফিয়া কামাল এবং কবি ও সাহিত্য সমালোচক আবদুল কাদির নানাভাবে দেশের শিল্প-সাহিত্যকে ঋদ্ধ করেছেন : সেলিনা হোসেন

বেগম সুফিয়া কামাল এবং কবি ও সাহিত্য সমালোচক আবদুল কাদির নানাভাবে দেশের শিল্প-সাহিত্যকে ঋদ্ধ করেছেন : সেলিনা হোসেন

কোরবানির গোস্ত দিয়ে কোন অনুষ্ঠান করে টেবিল বসিয়ে টাকা বা উপহার নেওয়া প্রসঙ্গে।

কোরবানির গোস্ত দিয়ে কোন অনুষ্ঠান করে টেবিল বসিয়ে টাকা বা উপহার নেওয়া প্রসঙ্গে।

শিরোপার রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষা : শেষ ম্যাচে মাঠে নামছে সিটি-আর্সেনাল

শিরোপার রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষা : শেষ ম্যাচে মাঠে নামছে সিটি-আর্সেনাল

কিরগিজস্তানে আহত বাংলাদেশি ছাত্রদের দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনুন

কিরগিজস্তানে আহত বাংলাদেশি ছাত্রদের দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনুন

বিক্ষোভ, গাড়ি ভাঙচুর, অটোরিকশাচালকদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া

বিক্ষোভ, গাড়ি ভাঙচুর, অটোরিকশাচালকদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া